Communication লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
Communication লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
COMMUNICATION MASTERCLASS TAHSAN KHAN
The Secret Sauce of Storytelling by Tahsan Khan
আপনার সবচেয়ে প্রিয় স্পিচটি মনে করুন। মার্টিং লুথার কিং এর 'I Have a Dream', বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ, Steve Jobs এর Stay Hungry, Stay Foolish - এগুলোর সাথে আপনি নিশ্চয়ই পরিচিত। পাবলিক স্পিকিং এক ধরনের আর্ট, যা আপনাকে শিখতে হবে, প্র্যাকটিস করতে হবে।
1. Become a Storyteller:আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, একটি খরগোশ এবং কচ্ছপের গল্প বলুন তখন কিন্তু আপনার ছোটবেলায় পড়া সেই গল্পটার কথা মনে পড়বে যে গল্পটার মূলমন্ত্র হচ্ছে Slow and steady wins the race। অথচ পড়াশোনার কোনো থিওরি কিন্তু আপনি হুট করে মনে করতে পারবেন না। এখানেই আসলে স্টোরিটেলিংয়ের পাওয়ার। পাবলিক স্পিকিং এর ক্ষেত্রে, স্টোরিটেলিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
2. Be Confident:পাবলিক স্পিকিং এর জন্য আপনাকে অবশ্যই কনফিডেন্ট হতে হবে। আপনি যদি স্পিকিং এর সময় নার্ভাস থাকেন এবং তা বোঝা যায়, আপনার অডিয়েন্সের কাছে গ্রহণযোগ্যতা কমে যেতে পারে। তাই আপনার স্পিচ আগে থেকেই গুছিয়ে নিন।
3. Don't Memorize Your Speech : আপনার স্পিচ কখনোই মুখস্থ করবেন না। মুখস্থ করা স্পিচ অডিয়েন্স বুঝতে পারে। স্পিচের মেইন পয়েন্টগুলো মনে রাখুন।
4. Building the Story: সব সময় যে কোনো প্রোডাক্ট, সার্ভিস অথবা কোনো ক্যারেক্টার, ঘটনা সম্পর্কে যখন গল্প বলতে গেলে এন্টিসিপেশন বা প্রত্যাশা তৈরি করুন। এরপর এমনভাবে স্টোরিটাকে ডিটেলিং করুন যেন চোখের সামনে বা মস্তিষ্কের মধ্যে সেই পুরো এনভায়রনমেন্ট টা শ্রোতা ভিজুয়ালাইজ করতে পারেন। যে জায়গাগুলোতে এক্সাইটেড ভয়েস প্রয়োজন সেই জায়গায় এক্সাইটেড হয়ে কথা বলতে হবে। পাব্লিক স্পিকিং করার সময় বিভিন্ন জায়গায় সাসপেন্স এর জন্য হোক অথবা অডিয়েন্সকে বোঝার জন্য হোক- স্পিকিং এর মধ্যে এপ্রোপ্রিয়েট জায়গায় থামাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং সিচুয়েশনটাকে একটু বোঝা খুব প্রয়োজন। তাই সময় বুঝে বিরতি নিন।
5. Know and Engage with Your Audience: ধরুন আপনার পাবলিক স্পিকিং এর টপিক স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কিন্তু আপনি কথা বলতে চাচ্ছেন একটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে। তাহলে আপনি যদি বড় বড় গাণিতিক টার্ম ব্যবহার করেন তাহলে তো আপনার অডিয়েন্স এর সাথে কানেক্ট করতে পারে না এবং এফেক্টিভ কমিউনিকেশন হবে না।
6. Temporal Bias & Political Correctness: সময়ের সাথে আমাদের চিন্তাভাবনার প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটছে। ডিজিটাল মিডিয়ার কল্যাণে তা এই পরিবর্তন আসছে আরো দ্রুত। গত দশকেও যেসব চিন্তাধারা প্রচলিত ছিল, সেগুলো কিন্তু এখনকার সময়ে irrelevant হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গত দশকে পাবলিকলি বলা কথাগুলো শুনে এখন আমরা বর্তমান সময়ের মাপকাঠিতেই সেগুলো বিচার করি। একেই Temporal Bias বলা হয়।
পাবলিক স্পিকিং এর ক্ষেত্রে Temporal Bias এর ধারণা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবসময়ই যে আমরা বুঝবো কোন ধারণা সামনে পরিবর্তন হয়ে যাবে, তা আসলে সম্ভব নয়। কিন্তু যতটুকু সম্ভব aware থাকতে হবে, যেন সময়ের সাথে বদলে যেতে পারে এরকম ধারণাগুলো নিয়ে আমরা সাবধানে কথা বলি। পাবলিক স্পিচগুলো অনেক ডিজিটাল মিডিয়াতে থেকে যায়, এটা মাথায় রেখেই আপনার স্পিচ তৈরি করবেন, যেন এক দশক পরে শুনলেও আপনার স্পিচের তথ্য relevant থাকে। পাবলিক স্পিকিং এর সময় এই ব্যাপারটাও মাথায় রাখুন, আপনার স্পিচ যেন কোনো নির্দিষ্ট মানুষ বা গোষ্ঠীর প্রতি অসম্মানজনক না হয়।
কমিউনিকেশন বা যোগাযোগের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে তথ্যের আদান-প্রদান। আপনি যখন কারো সাথে কথা বলছেন কিংবা কাউকে কোনো মেসেজ পাঠাচ্ছেন- that is Communication। আপনি যখন রাস্তায় পরিচিত কারো সাথে দেখা হওয়ার সময় তাকে হাই দিচ্ছেন- এটাই হচ্ছে কমিউনিকেশন। আবার কেউ যখন আপনার সাথে কথা বলছে এবং আপনি মাথা নেড়ে বোঝাচ্ছেন যে আপনি তার কথা বুঝতে পারছেন- এটাও কমিউনিকেশন। প্রতিদিন আমরা আমাদের personal ও professional জীবনে অসংখ্য মানুষের সাথে লিখিত, মৌখিক বা body language এর মাধ্যমে কমিউনিকেট করে যাচ্ছি। এই কোর্সে আমরা কীভাবে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে রিটেন, ভার্বাল এবং নন ভার্বাল কমিউনিকেশন আরো ইফেক্টিভলি করা যায় সেই strategies নিয়ে আলোচনা
করব।
কমিউনিকেশন কেন?
ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন আপনার ব্যক্তিগত ও পেশাদারী জীবনের একটি প্রয়োজনীয় স্কিল। একজন strong communicator তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই স্কিলটি ব্যবহার করে সবার সাথে সাবলীল সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।
ব্যক্তিগত জীবনে কমিউনিকেশন:
আপনি কোন ভাষায় বলছেন, আপনার facial expression কী, আপনার voice কেমন- এই সবকিছু নির্ধারণ করে দেয় আপনার কথাটা আপনার সামনের মানুষকে কেমন feel করাবে। তিনি কি আপনার কথায় খুশি হবেন নাকি কষ্ট পাবেন, তার সাথে আপনার সম্পর্ক কি আরো ভালো হবে, না খারাপ হবে- এর সবকিছুই নির্ভর করে আপনার কমিউনিকেশন স্কিলের উপর।
Professional life এ কমিউনিকেশন:
চাকরি, ব্যবসা, ফ্রিল্যান্সিং, ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, অভিনয়, স্পোর্টস, গান গাওয়া- পৃথিবীতে এমন কোনো প্রফেশন নেই যেখানে কমিউনিকেশন স্কিল প্রয়োজন হয় না। আপনি কোনো একটি কাজে যতই দক্ষ হন না কেন, আপনি সেই কাজটা কখনো একদম একা একা করতে পারবেন না। আপনাকে অন্যদের সাথে কোনো না কোনোভাবে collaborate করে কাজ করতে হবে, এবং এর জন্য ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন এর কোনো বিকল্প নেই।
ইফেক্টিভ কমিউনিকেশনের জন্য কী কী প্রয়োজন?
ভাষা জ্ঞান: কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপ করার ক্ষেত্রে বাংলা এবং ইংরেজির ভাষাগত দক্ষতা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। আমরা অনেকেই ভাবি, বাংলা তো আমাদের মাতৃভাষা, এটা তো পারিই, এখানে আবার শেখার কী আছে? অথচ গুছিয়ে কিছু একটা বলতে বা লেখার প্রয়োজন হলেই আমরা অনেকে বিপদে পড়ে যাই। এজন্য নিয়মিত বাংলা এবং ইংরেজি ভাষা বলা এবং লেখা চর্চা করা উচিত।
অবজারভেশন: প্রত্যেক ইফেক্টিভ কমিউনিকেটরই একজন অবজারভেন্ট মানুষ। তিনি মানুষের আচার-আচরণ, আগ্রহ-অনাগ্রহ, উদ্দেশ্য, এবং বিভিন্ন শারীরিক ভাষা খেয়াল করেন। যার সাথে কমিউনিকেট করবেন তাকে যদি Observe না করেন, তাহলে কমিউনিকেশন একমুখী হয়ে যাবে। তাই একজন স্কিলড কমিউনিকেটর হতে হলে পর্যবেক্ষণ করবার ক্ষমতা আয়ত্ত করতে হবে।
Empathy বা সহমর্মিতা: এম্প্যাথি বা সহমর্মিতার অর্থ হলো নিজেকে অন্যের জায়গায় রেখে দেখা। আপনি যার সাথে communicate করছেন, তার কী অবস্থা, আপনার কথা তার উপর কী প্রভাব ফেলবে, তার reaction কেমন হবে- এটা বুঝে communicate করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামনের মানুষের প্রতি এম্প্যাথি রেখে, তিনি আপনার কথা শুনে কেমন বোধ করবেন, এগুলো ভেবে যখন communicate করবেন, তখন মানুষটির সাথে আপনার একটা understanding তৈরি হবে এবং future communication এর সুযোগ বাড়বে। এজন্য ভালো কমিউনিকেশন এর পূর্ব শর্ত হচ্ছে এম্প্যাথি।
ভালো Communication এর ৭টি Quality
একটা যোগাযোগ কখন সফল যোগাযোগ হয় বা ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন হয়? এটার খুব সহজ একটা ফর্মুলা হচ্ছে The 7C of Communication। কী সেই সাতটি C? চলুন দেখে নেয়া যাক।
Clear (ক্লিয়ার): ক্লিয়ার বা স্পষ্ট। আপনি যা বলছেন, যা লিখছেন, যা উপস্থাপন করছেন তা স্পষ্ট হতে হবে। এ কারণেই কোনো চিঠিতে খারাপ হাতের লেখা কিংবা কোনো প্রেজেন্টেশনে আমতা আমতা করে কথা বলা কে আমরা দুর্বল কমিউনিকেশন হিসেবে ধরে নেই। আমরা অনেকেই খুব দ্রুত কথা বলার চেষ্টা করি। কিন্তু আদতে দ্রুত কথা বলতে গিয়ে এক কথা রিপিট হয়, বাক্য অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এবং শেষ পর্যন্ত কমিউনিকেশনের স্পষ্টতা কমে যায়। কমিউনিকেশনের স্পষ্টতা কমে যাওয়ার আরেকটা কারণ হচ্ছে অপ্রয়োজনীয়
jargon, abbreviation কিংবা কঠিন কঠিন শব্দ ব্যবহার করা।
Correct (কারেক্ট): কমিউনিকেশন হতে হবে সঠিক। অর্থাৎ ভুল তথ্য কিংবা অর্ধসত্য তথ্য, যে বিষয়ে আপনি নিজেই পুরোপুরি নিশ্চিত না, সেই জিনিসটি অন্য কাউকে জানানো; এগুলো কমিউনিকেশনের খুব বেসিক ভুল। আপনাকে কেউ জিজ্ঞেস করলো- গত মাসের sell (বিক্রয়) কত? আপনি চক্ষুলজ্জায় বলে ফেললেন ৩ লাখ টাকা। অথচ আপনার কোনো ধারণা ছিলোনা এই বিষয়ে। কোনো তথ্য না জানলে বলতে পারেন, “আমি এই মুহুর্তে সঠিক তথ্যটির ব্যাপারে নিশ্চিত নই, আমি আপনাকে জেনে জানাই?” এটা ধারণা বহির্ভূত তথ্য দেওয়ার থেকে অনেক বেশি ভালো একটা পথ। প্রফেশনাল সার্কেলে বা বন্ধুমহলে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা টিকিয়ে রাখতে নির্ভুল কমিউনিকেশন প্রয়োজন।
Complete (কমপ্লিট): ধরুন আপনি একটা সেমিনারে গিয়েছেন। সেখানে আপনাকে নিজের পরিচয় দিতে বলা হলো। আপনি বললেন, "আমার নাম সাগর।” এতে করে আপনার পরিচয় কি সম্পূর্ণ হলো? আপনার পুরো নাম, আপনি কোথায় কাজ করেন, কী কাজ করেন এগুলো কিন্তু আপনার পরিচয় এর একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটা অসম্পূর্ণ কমিউনিকেশন এর একটা উদাহরণ। ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন মাত্রই তাকে সম্পূর্ণ বা কমপ্লিট হতে হবে। আমাদের অফিস বা কর্মস্থলেও এ ধরনের ইনকমপ্লিট কমিউনিকেশনের কারণে অনেক কনফিউশন তৈরি হয়।
Concrete (কংক্রিট): কমিউনিকেশনে ambiguous কথা যত কম ব্যবহার করা যায় তত ভালো। বিশেষ করে professional communication এ আমরা অনির্দিষ্ট, ভাসা ভাসা কথার থেকে সুনির্দিষ্ট কমিউনিকেশন বেশি প্রেফার করি। ডেটা বা সংখ্যা ব্যবহারের মাধ্যমে কমিউনিকেশনকে আরো কংক্রিট করা যায়। আপনি একটা প্রেজেন্টেশনে আপনাদের ব্যবসার বর্তমান অবস্থা তুলে ধরছেন। সেখানে আপনি বললেন, “আমাদের ব্যবসা ভালোই চলছে। গতমাসে মোটামুটি বিক্রি
হয়েছে। আমরা আগামী মাসে আরো ভালো করার চেষ্টা করব।” এখানে ভালো মানে কী বা মোটামুটি মানেই বা কী? আগামী মাসে আরো ভালো করবো- সেই আরও ভাল মানে কী? এর থেকে আপনি যদি বলেন, "এবছর আমাদের ব্যবসা 6.8% grow করেছে। গত মাসে মোট বিক্রয়ের পরিমাণ 10 লক্ষ টাকা। আমরা আগামী মাসে 12 লক্ষ টাকা বিক্রয় করবার target নিয়েছি।" এখানে প্রতিটি তথ্য অত্যন্ত স্পেসিফিক, এবং তার জন্য বুঝতে ও অনুধাবন করতে সহজ।
Concise (কনসাইস): ধরুন আপনি আপনার বন্ধুকে আপনার পাসপোর্ট বানাতে দেয়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলছেন। আপনি যদি গল্পটা এভাবে বলেন, “দোস্ত, ওই দিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠলাম। উঠে দাঁত ব্রাশ করলাম। ভালো একটা শার্ট প্যান্ট পড়ে রাস্তায় বের হয়ে বেশ কিছুক্ষণ রিক্সা খুজলাম। পেলাম না। হেঁটে বহুদূর আসলাম। এর পরে হঠাৎ মনে পড়ল নাস্তা করে বের হইনি। তাই একটি হোটেলে দাঁড়িয়ে নাস্তা করে নিলাম।”
এখানে দেখা যাচ্ছে পাসপোর্ট অফিসে পৌঁছানোর আগেই আপনার গল্পটা এত বড় হয়ে গেছে যে শ্রোতা হয়তো এর মধ্যেই গল্পটা থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তাই Personal বা Professional যেকোনো কমিউনিকেশন যথাসম্ভব সীমিত এবং প্রাসঙ্গিক হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও ব্যক্তিগত কমিউনিকেশন বা আড্ডায় অনেক সময়ই আমরা অপ্রাসঙ্গিক অনেক বিষয় টেনে আনি, অপরিচিত ব্যক্তির সাথে কিংবা Professional আলাপচারিতায় এই কাজটা একদমই করা যাবেনা।
Consideration (কনসিডারেশন): কনসিডারেশন বলতে বোঝায় বিবেচনা বোধ। আপনি যখন কথা বলছেন তখন আপনার শ্রোতার আগ্রহ, বোঝার ক্ষমতা, তার মতামত ইত্যাদির দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
Communication এর ধরন
কমিউনিকেশনের অনেক ধরনের ক্লাসিফিকেশন করা যেতে পারে। এখানে কমিউনিকেশনের খুব ইন্টারেস্টিং দুটো ক্লাসিফিকেশন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রথমত, একটা কমিউনিকেশন কতটুকু ফরমাল হবে বা কতটুকু ক্যাজুয়াল হবে তার উপরে ভিত্তি করে কমিউনিকেশন কে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে- ফরমাল কমিউনিকেশন এবং ইনফরমাল কমিউনিকেশন। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে যে ফরমাল কমিউনিকেশন হবে আনুষ্ঠানিক। অফিস বা বিজনেস মিটিং এর জন্য প্রযোজ্য। আর অন্যদিকে ইনফরমাল কমিউনিকেশন হবে ক্যাজুয়াল। পারিবারিক বা ব্যক্তিগত আলাপে, বন্ধুদের আড্ডায় প্রযোজ্য। ফর্মাল এবং ইনফর্মাল কমিউনিকেশনে ভাষা, কথা বলার ভঙ্গি এবং কথা বলার বিষয়বস্তুতে আর কী কী ধরনের পার্থক্য থাকতে পারে চলুন দেখে নেই ।
প্রথমত, ভাষাগত পার্থক্য। স্বাভাবিকভাবেই ফর্মাল কমিউনিকেশনে আমরা তুলনামূলক মার্জিত ভাষা ব্যবহার করি। সেখানে আঞ্চলিক ভাষা বা আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কিংবা ট্রেন্ডি ক্যাচ ফ্রেইজ গুলো একেবারেই ব্যবহার করা হয় না।
দ্বিতীয়ত, কমিউনিকেশনের স্ট্রাকচার বা কাঠামো। ফরমাল কমিউনিকেশন এর ক্ষেত্রে বাঁধাধরা কিছু কাঠামো বা নিয়ম রয়েছে, যেগুলো বিভিন্ন অফিস বা বিজনেস অর্গানাইজেশনে ব্যবহার করা হয়। যেমন, একটা মিটিং এর স্ট্রাকচার। বিজনেস মিটিং বা অফিশিয়াল মিটিং- ফরমাল কমিউনিকেশন এর উদাহরণ। এবং এই কমিউনিকেশন করার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ অফিসেই একটা সুনির্দিষ্ট কাঠামো ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে ইনফর্মাল কমিউনিকেশন তেমন কোনো structure মেনে চলে না। একটি ইনফরমাল কমিউনিকেশন কেমন হবে এটা যাদের মধ্যে কমিউনিকেশন হচ্ছে তাদের মধ্যকার সম্পর্কের উপর নির্ভর করে, আবার কখনো সিচুয়েশনের উপরও নির্ভর করে। ইনফরমাল কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে স্থান-কাল-পাত্রের বিবেচনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে অল্প পরিচিত মানুষের সাথে অতিরিক্ত সহজভাবে কথা বলা, গায়ে হাত রেখে কথা বলা, তাদের ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন করা বা মন্তব্য করা- এগুলো অনেকসময় বিরক্তি বা বিব্রতকর পরিস্থিতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তৃতীয়ত, কমিউনিকেশনের দৈর্ঘ্যঃ ফরমাল কমিউনিকেশন যতটুকু সম্ভব সংক্ষিপ্ত এবং to the point রাখতে হয়।
সেখানে খুব বেশি কুশল বিনিময়ের সুযোগ নেই। অন্যদিকে, ইনফরমাল কমিউনিকেশনের দৈর্ঘ্য তুলনামূলক বড় হয়। তবে সেটাও কার সাথে কমিউনিকেট করছেন, তার সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন এবং বর্তমান পরিস্থিতি কেমন তার ওপর নির্ভর করবে।
কমিউনিকেশন কতটুকু সরাসরি হবে তার ওপর নির্ভর করেই কমিউনিকেশন কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ডিরেক্ট কমিউনিকেশন এবং ইনডিরেক্ট কমিউনিকেশন। সহজ ভাষায় ডিরেক্ট কমিউনিকেশন বলতে বোঝায় আপনি যা মিন করছেন সরাসরি তাই বলা। সেই কথাটি কে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অন্য ভাষায় বলাই হলো ইনডিরেক্ট কমিউনিকেশন।
ডিরেক্ট কমিউনিকেশন এবং ইনডিরেক্ট কমিউনিকেশনের মধ্যকার সম্পর্ক কিন্তু একদম বাইনারি নয়। মানে কোনো একটি কমিউনিকেশন একদম ডিরেক্ট হবে বা একদম ইনডিরেক্ট হবে এটা নাও হতে পারে। ব্যাপারটা একটা স্পেকট্রামের মত। অর্থাৎ কিছু কমিউনিকেশন একটু বেশি ডিরেক্ট, কিছু কমিউনিকেশন একটু কম ডিরেক্ট এমনটা হতে পারে।
প্রফেশনাল কমিউনিকেশনের জন্য ডিরেক্ট কমিউনিকেশন বেশি প্রযোজ্য। আপনার বস যদি আপনাকে একটা ইমেইল ড্রাফট করে আনতে বলেন, সে ক্ষেত্রে সেটা সরাসরি বলাই ভালো। এখানে ইনডিরেক্ট কমিউনিকেশন করতে গেলে বরং সময় নষ্ট হবে, কনফিউশন সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ধরুন, আপনি তাকে বললেন, “এই ইমেইলটি ড্রাফ্ট হওয়া দরকার।” এখন ইমেইল টা আপনি তাকে ড্রাফ্ট করতে বলেছেন নাকি অন্য কাউকে ড্রাফ্ট করতে বলেছেন এটা কিন্তু স্পষ্ট হলো না। এই ধরনের কনফিউশন এড়িয়ে চলার জন্যই অফিসে ডিরেক্ট কমিউনিকেশন প্রেফার করা হয়।
এর বেশ কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। অফিসের বেশ কিছু জটিল পরিস্থিতি আপনাকে ইনডিরেক্ট কমিউনিকেশন দিয়ে সমাধান করতে হতে পারে। ধরুন আপনার দুজন সহকর্মীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছে না। সব সময় ঝগড়া লেগেই আছে। এক্ষেত্রে আপনি যদি সবার সামনে বলেন যে "আমাদের পারস্পরিক বন্ডিং এবং টীম বিল্ডিং টা যত বেশি স্ট্রং হবে আমাদের প্রতিষ্ঠান ততবেশি সামনে এগিয়ে যাবে। তাই আসুন আমরা পরস্পরের সাথে co-operate করে প্রবলেম গুলো সল্ভ করতে চেষ্টা করি।” এখানে আপনি সরাসরি দুজন ব্যক্তিকে কিছু বলেননি, কিন্তু ইঙ্গিত এর মাধ্যমে তাদেরকে তাদের সমস্যা সমাধান করে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
অনেক ক্ষেত্রে ইনডিরেক্ট কমিউনিকেশন পোলাইটনেস বা ভদ্রতা প্রকাশ করে। ধরুন আপনি অফিসে বসে আপনার কলিগের সাথে কোনো একটা বিষয় ব্রেইনস্টর্ম করছেন। দুজন মিলে আইডিয়া বের করার চেষ্টা করছেন। এখন আপনার কলিগ একটা আইডিয়া দিল। আইডিয়াটা আপনার খুব একটা পছন্দ হয়নি। এক্ষেত্রে আপনি বলতে পারেন, "হ্যাঁ আপনার আইডিয়াটা বেশ সুন্দর কিন্তু আমাদের সমস্যার সাথে এটা কতটুকু খাপ খাবে আমি ঠিক নিশ্চিত না। আমরা কি আরো কিছু অল্টারনেটিভ ডিসকাস করতে পারি?" এভাবে করে আপনি তার সাথে দ্বিমত পোষণ করলেও তাকে অপমান করলেন না। এরকম করে, সিচুয়েশন এবং অবস্থা বুঝে আমাদেরকে ডিরেক্ট এবং ইনডিরেক্ট কমিউনিকেশনের মধ্যে ব্যালেন্স করতে হবে। তবে চিন্তার কারণ নেই, কিছুদিন চর্চা করলেই আপনি নিজ থেকেই এই দুই ধরনের কমিউনিকেশন ব্যবহার করা শিখে যাবেন।